empty
 
 
23.06.2025 06:31 AM
EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতার জন্য প্রস্তুত থাকুন

এ সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের জন্য অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন ও ইভেন্ট নির্ধারিত রয়েছে। PMI ও IFO সূচক, মার্কিন কনজিউমার কনফিডেন্স ইনডেক্স, কোর PCE প্রাইস ইনডেক্স, এবং মার্কিন জিডিপির চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশিত হবে—এসব প্রতিবেদন সাধারণত EUR/USD-এর উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। তবে এবার এই প্রভাব কম থাকতে পারে। এর পাশাপাশি, সপ্তাহজুড়ে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এবং ফেডের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুষ্ঠিত হবে।

তবুও, এই সবকিছুর গুরুত্বকে ছাপিয়ে যাবে রবিবার সংঘটিত এক ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা।

This image is no longer relevant

২২ জুন, রবিবার ভোরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে মার্কিন বাহিনী ইরানি ভূখণ্ডে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তাঁর মতে, মার্কিন বাহিনী ফোরডো, নাটানজ ও ইসফাহান স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।

এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা—ইরাক বা সিরিয়ায় প্রক্সি টার্গেটের পরিবর্তে ইরানের ভূখণ্ডে এই প্রথমবার সরাসরি সামরিক হামলা চালানো হলো।

হামলাটি ছুটির দিনে সংঘটিত হওয়ায়, সোমবার কারেন্সি মার্কেটে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ, শুক্রবার ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ইরানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। অথচ শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের কথার বিপরীতে পদক্ষেপ নিয়ে "TACO থিওরি" (Trump Always Caves Out) ভুল প্রমাণ করেছেন এবং নিজের দৃঢ় অবস্থান আরও জোরদার করেছেন।

ইরানের হরমুজ প্রণালী অবরোধের হুমকি বিবেচনায়, মার্কিন হামলার প্রভাব মার্কেটে নিশ্চিতভাবে প্রতিফলিত হবে, বিশেষ করে তেলেরবাজারে। ইতোমধ্যে ইরানি পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী অবরোধের পক্ষে ভোট দিয়েছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, "এটি বাতিলযোগ্য নয়।"

এর পাশাপাশি, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সদস্যরা জানিয়েছেন যে, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন জবাব পাবে যাতে তারা হামলার জন্য অনুতপ্ত হবে।" এদিকে তেহরান জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের উপর হামলা অব্যাহত রাখবে।

তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০% (প্রতিদিন প্রায় ১৫–১৭ মিলিয়ন ব্যারেল) তেল রপ্তানি হয়, তাই এই প্রণালী বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও তেলের দাম বাড়িয়ে দেবে। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, ২০১১–২০১২ সালে ইরান যখন প্রণালীটি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল, তখন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ১৫% বেড়ে গিয়েছিল। এখন প্রকৃতপক্ষে অবরোধ দেয়া হলে, বিশেষ করে সামরিক সংঘাতের আবহে, তার প্রতিক্রিয়া আরও বেশি তীব্র হতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ব্রেন্ট ক্রুডের দর $১২০–১৩০-এর ওপরে চলে যেতে পারে।

আরেকটি সম্ভাব্য প্রভাব হলো ঝুঁকিহীন অ্যাসেটের প্রতি চাহিদা বৃদ্ধি। জাপানি ইয়েন, সুইস ফ্রাঁ, এবং স্বর্ণের মতো নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বাড়তে পারে। তবে মার্কিন ডলারের পরিস্থিতি অনিশ্চিত। মধ্যপ্রাচ্যের সংকটগুলো ঐতিহাসিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মনে করিয়ে দেয় যে ডলার একটি নিরাপদ বিনিয়োগ। কিন্তু কোনো ধরণের উত্তেজনা প্রশমনের সংকেত পাওয়া গেলে, তা ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের সমর্থন জোগায়।

তবে এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। প্রথমত, পরিস্থিতির নজিরবিহীনতা—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালানোয়—বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য পরিণতির পরিসর গতকালের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত, যা ডলারের পক্ষে কাজ করছে না।

দ্বিতীয়ত, তেলের বাজার সম্ভবত ডলারকে সমর্থন দিতে পারবে না, বিশেষ করে যদি তেলের দর $৮০–৮৫ ব্যারেলের ওপরে থাকে। প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যাগফ্লেশন বা অর্থনৈতিক স্থবরিতার আশঙ্কা আবারো জেগে উঠতে পারে। কিছু বিশ্লেষক ইতোমধ্যে এটিকে ১৯৭০-এর দশকের মতো "ভূ-রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট স্ট্যাগফ্লেশন" বলে অভিহিত করছেন।

তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকেও ডলারের ওপর চাপ তৈরি হতে পারে। Axios-এর মতে, কংগ্রেসের বেশিরভাগ রিপাবলিকান এবং কিছু প্রো-ইসরায়েল ডেমোক্র্যাট এই ঘটনার সমর্থন দিলেও, উভয় দলের মধ্যেই বিরোধীতা বাড়ছে। Axios-এর একটি সূত্র জানায়, ট্রাম্পের "এত বড় সামরিক পদক্ষেপ" নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন দরকার ছিল। কয়েকজন আইনপ্রণেতা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গুরুতর আইনি পরিণতির, এমনকি অভিশংসনের হুমকিও দিয়েছেন। কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ইরানে বোমা হামলার আদেশকে "অভিশংসনের জন্য একটি স্পষ্ট ভিত্তি" বলে অভিহিত করেছেন। সিনেট হোয়াইট হাউসকে আহ্বান জানিয়েছে যে, এই হামলার আইনি ভিত্তি এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর লক্ষ্য ব্যাখ্যা করা হোক।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মার্কেটে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে কারেন্সি মার্কেটে। তবে এটি নিশ্চিত নয় যে এই পরিস্থিতিতে ডলার সুবিধা পাবে, এমনকি স্বল্পমেয়াদে চাহিদা বেড়ে গেলেও।

সবকিছু নির্ভর করবে ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তার ওপর। দ্য ইকোনোমিস্টের মতে, তেহরান প্রতীকী প্রতিক্রিয়া বেছে নিতে পারে, যেমনটি তারা পাঁচ বছর আগে ট্রাম্পের আদেশে জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করার পর করেছিল। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র "উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের" কৌশল গ্রহণ করতে পারে—তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে উৎসাহিত করতে পারে এবং ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় ফেরাতে আহ্বান জানাতে পারে।

তবে আরও উত্তেজনাকর পথও খোলা রয়েছে, যেমন: তেলের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট অবরোধ করা, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বা মিত্র ঘাঁটিতে হামলা, ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে পারে যার পরিণতি অনিশ্চিত।

এই মুহূর্তে একটাই বিষয় নিশ্চিত: এই ভূ-রাজনৈতিক খেলার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এর অর্থ হলো, নতুন সপ্তাহে মূল্যের অস্থিরতার সাথে প্রধান ডলার-পেয়ারগুলোর ট্রেডিং শুরু হবে। EUR/USD-ও এর ব্যতিক্রম হবে না।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.